ভূমিকম্প আঘাত হানার ২০০ ঘণ্টা পরও তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের একটি ধসে যাওয়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১৮ বছর বয়সী এক কিশোরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পের ৯ দিনের বেশি সময় পর মঙ্গলবার ওই কিশোরসহ মোট তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন তুরস্কের উদ্ধারকর্মীরা। গত ৬ ফেব্রুয়ারী স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে প্রতিবেশী দুই দেশ তুরস্ক ও সিরিয়ায়। রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে উভয় দেশে এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

ভূমিকম্প আঘাত হানার ৯ দিনের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কয়েকজনকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। হাজার হাজার ভবনের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান চলমান থাকায় প্রাণহানির সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন তুর্ক এক প্রতিবেদনে বলছে, মঙ্গলবার সকালের দিকে তুরস্কের আদিমান প্রদেশের একটি ধসে যাওয়া ভবনের নিচ থেকে মুহাম্মদ জাফর নামের এক কিশোরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত আদিমানের একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে ওই কিশোরকে উদ্ধারের পর স্ট্রেচারে করে নেওয়া হচ্ছে। এ সময় তার মুখে অক্সিজেন মাক্স ও হাতে স্যালাইন লাগানো দেখা যায়। পরে সেখান থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে স্থানীয় এক হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। ভূমিকম্পে ধসে যাওয়া ভবনের নিচে আটকে পড়ার প্রায় ১৯৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার এই কিশোরকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতের আঙুল নড়াচড়া করতে দেখা যায়।

এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই দেশটির উদ্ধারকারীরা পার্শ্ববর্তী কাহরামানমারাস প্রদেশের একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে দুই সহোদরকে জীবিত উদ্ধার করেন। তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু কাহরামানমারাস প্রদেশের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১৭ বছর বয়সী মুহাম্মদ এনেস ইয়েনিনার ও তার ভাই ২১ বছর বয়সী বাকি ইয়েনিনারকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। পরে ধ্বংসস্তূপের পাশেই রাখা অ্যাম্বুলেন্সে করে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাদের। তবে এই দুই ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে পরিষ্কার কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

সর্ববৃহৎ ফিল্ড হাসপাতাল : তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার পর উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছে বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশ। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্ধারকারী দলও রয়েছে। পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসায় দেশটিতে সর্ববৃহৎ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটি।
গত সপ্তাহে তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প। এতে হাজার হাজার ভবন ও স্থাপনা ধসে পড়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। এর মধ্যে তুরস্কেই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আল আরাবিয়া জানিয়েছে, তুরস্কের গাজিয়ানটেপ প্রদেশের ইসলাহিয়ে জেলায় রিলিফ ফিল্ড হসপিটাল স্থাপন করেছে আমিরাতি কর্তৃপক্ষ। সেখানে ভূমিকম্পে আহতদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আমিরাতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াম মঙ্গলবার বলেছে, তুরস্কের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং দেশটির দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে ফিল্ড হাসপাতালটি। ৪০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে প্রতিস্থাপিত হাসপাতালটিতে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ১৫ জন চিকিৎসক এবং ৬০ জন নার্স ও সহকারী রয়েছেন। এছাড়া তুরস্কে উদ্ধার ও অনুসন্ধান অভিযানেও অংশ নিচ্ছে আমিরাতি উদ্ধারকারী দল। দেশটির ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য অর্থ সাহায্য ঘোষণা করেছে আমিরাতি কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে সিরিয়া ও তুরস্কের জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন শহরে ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।

ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ : তুর্কি এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড বিজনেস কনফেডারেশনের (তুর্কনফেড) বরাত দিয়ে ব্লমবার্গ জানিয়েছে, বিধ্বংসী ভূমিকম্পে তুরস্কের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে। যা দেশটির জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ।
তুর্কি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীটির অনুমান, গেল ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে তুরস্কের আবাসিক ভবনগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক হিসাবে প্রায় ৭০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে আরও ১০ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তুর্কনফেড জানিয়েছে, এ ভূমিকম্পের কারণে দেশটির শ্রমখাতও ক্ষতির মুখে পড়েছে। আর্থিক হিসাবে যা হবে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। কারণ শক্তিশালী এ ভূমিকম্প তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ার ১০টি প্রদেশকে বিপর্যস্ত করেছে। এতে এক কোটি ৩৫ লাখ মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।